সাম্প্রতিক কর্মকান্ড
প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম:
সমাজসেবা অধিদপ্তর শিশুদের বিকাশ, সুরক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের ২১২টি প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ৬টি ছোটমণি নিবাসে পরিত্যক্ত, ঠিকানাহীন, দাবিদারহীন ও পাচারকারীদের নিকট থেকে উদ্ধারকৃত এবং ০-৭ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের এবং ৮৫টি শিশু পরিবার ও ৩টি দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাধ্যমে দরিদ্র, অসহায়, ছিন্নমূল ও দুস্থ’ শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ, ভরণপোষণ শিশুদের সাধারণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, প্রশিক্ষণ, চিত্তবিনোদন নিশ্চিত করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ৬টি কেন্দ্রের মাধ্যমে এতিম ও প্রতিবন্ধীদের যুগোপযোগী কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানপূর্বক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সমাজে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে কাজ করে চলছে। ৫টি প্রাক-বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শিশু পরিবারের শিশুদের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ৪টি সরকারি বাক্-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ও ৬৪টি জেলায় সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুদের ভরণপোষণ, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্য করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে চলছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, বাক্-শ্রবণ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবকদেরকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে টঙ্গীতে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে। মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলার রউফাবাদে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশুদের উন্নয়নের জন্য ৩টি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে যার একটি মেয়েদের জন্য। একইভাবে মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতিদের কারাগারের বাইরে নিরাপদে রাখার জন্য ৬টি মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া অনৈতিক ও অসামাজিক পেশায় জড়িত মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের জন্য ৬টি ‘সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র’ রয়েছে। এছাড়া টুঙ্গিপাড়ায় একটি আদর্শমানের শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ ১৩টি জেলায় রয়েছে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। ‘জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্রে’ ব্যাচেলর অব স্পেশাল এডুকেশন (BSED) ডিগ্রিসহ মাস্টার্স অব স্পেশাল এডুকেশন (MSED) ডিগ্রি অর্জনের ব্যবস্থা রয়েছে। দেশের এতিম ও অনাথ শিশুদের কল্যাণে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় স্থাপিত এতিমখানার মধ্যে মাথাপিছু মাসিক ২,০০০ টাকা করে সরকারি অনুদান দেওয়া হয়। শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও ইউনিসেফ-এর সহায়তায় ‘চাইল্ড হেল্প লাইন-১০৯৮’ সেবা প্রদান করে আসছে।
ডিজিটাল সেবাগ্রহণে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও:
বঙ্গবন্ধু এমন সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে সকল নাগরিক পাবে সমান অধিকার। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই রচিত হয় একটি আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের ভিত্তি, যা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বিপ্লবে অংশগ্রহণের পথ দেখায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫% মানুষ প্রতিবন্ধী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-এর মতে বাংলাদেশে প্রায় ৯ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার, যার বিশাল একটি অংশই শিক্ষার্থী। শিক্ষাক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণে মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক উদ্যোগটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই সকল পাঠ্যপুস্তককে ফুল টেক্সট ও ফুল অডিও মাল্টিমিডিয়া টকিং বইতে প্রণয়ন করা হয়, যা বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। শিক্ষা ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিবন্ধীদের সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অংশীজনদের সহযোগিতায় সেবাপ্রাপ্তির পথও অনেক সুগম হয়েছে। ডিজিটাল কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সমাজসেবা অধিদপ্তর তৃতীয় জাতীয় ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ২০১৯ -এ শ্রেষ্ঠ সরকারি দপ্তর হিসেবে পুরস্কার লাভ করে।
সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম:
দেশে প্রথম বয়স্ক ভাতা যুগান্তকারী পদক্ষেপ গৃহীত হয় ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে ‘বয়স্ক ভাতা’ কর্মসূচির মাধ্যমে। দেশের ৫৭.০১ লক্ষ বয়স্ক উপকারভোগীর ভাতা G2P পদ্ধতিতে ভোগান্তি ছাড়াই অল্প সময়ে তাদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা দুস্থ নারীদের দুর্দশা লাঘবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা প্রবর্তন করেন ১৯৯৮ সালে। এছাড়া সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তি কর্মসূচি গ্রহণ করে। সমাজের পিছিয়ে পড়া সকল জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে কাজ করে। সে অনুযায়ী হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে ভাতা, উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদ্রোগ ও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগী ও তার পরিবারকে চিকিৎসা ব্যয় বহনে আর্থিক সহায়তা করা এবং রোগীকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের ফলে সুস্থ সমাজগঠনসহ সামাজিক সূচকে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে চলছে। চা বাগান শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও টেকসই আবাসন নির্মাণ ২০২১-২২ অর্থবছরের ৫০ হাজার জনকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় । এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৫টি আবাসন প্রদান করা হয়েছে। সরকার ভিক্ষাবৃত্তির মতো অমর্যাদাকর পেশা থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে ‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’ নামে কর্মসূচি গ্রহণ করে। এজন্য বিদ্যমান ৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ২টি পৃথক শেড নির্মিত হয়েছে। অবশিষ্ট ৪টির নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি:
হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ের ‘রোগী কল্যাণ সমিতি’র মাধ্যমে গরিব, অসহায় ও দুস্থ রোগীদের ঔষধ, রক্ত, খাদ্য, বস্ত্র, চশমা, হুইল চেয়ার ও সহায়ক সামগ্রীর মাধ্যমে রোগীদের আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক ৬৪টি জেলা এবং মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ৬টিসহ ৭০টি ইউনিটে প্রবেশন অ্যান্ড আফটার কেয়ার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ৬৪ জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে এ পর্যন্ত ৬৮,৮৯৮টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিবন্ধিত হয়ে সমাজসেবার ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ অবদান রাখছে। প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কল্যাণ ও সুরক্ষায় জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩ প্রণয়ন, পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩ প্রণয়ন, ২০১৪ সালের প্রবীণ ব্যক্তিদের ‘সিনিয়র সিটিজেন’ হিসেবে ঘোষণা, প্রতিটি শিশু পরিবারে প্রবীণদের জন্য ১০টি স্বতন্ত্র আসন নির্ধারিত রয়েছে, ৮ বিভাগে প্রবীণদের জন্য ৮টি শান্তিনিবাস স্থাপনের নির্মাণকাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
পরিকল্পনা বিষয়ক কার্যক্রম গ্রহণ:
সমাজসেবা অধিদপ্তর উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে তাদের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৯টি প্রকল্প ও ১টি কর্মসূচি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ৬৪ জেলায় জেলা সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ম পর্যায়ে ২২টির মধ্যে ১৭টি জেলা সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। ক্যাশ ট্রান্সফার মডার্নাইজেশন (সিটিএম) প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৬৫০ জন সমাজকর্মীকে আধুনিক ট্যাব এবং কার্যালয়ে ৫৭০টি মোটর সাইকেল প্রদান করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক পেশাজীবীদেরকে ট্রেডভিত্তিক প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অটুট রাখতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের জনবলের পেশাগত দক্ষতা ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় সমাজসেবা একাডেমিতে কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন হচ্ছে। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ৬টি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।
মানবকল্যাণ পদক:
ডিজিটাল সেবা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অভিগম্যতা নিশ্চিত করনার্থে সমাজসেবার গৃহিত কার্যক্রম সমুহ দুর্বার গতিতে চলমান রয়েছে। মানবকল্যাণে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তি ও সংগঠনকে উৎসাহ প্রদানের নিমিত্ত ২০২০ সালে পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সে অনুযায়ী ২০২৩ সালেই প্রথম সমাজহিতৈষী ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে ২০২০ এবং ২০২১ সালে গৌরবোজ্জল ভূমিকা রাখার জন্য মানবকল্যাণ পদক প্রদান করা হয়েছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস